বাচ্চা না
হবার জন্য যেসব মেয়েরা আমাদের কাছে আসে, তাদের একটা বড় অংশ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান
সিনড্রম রোগে ভুগে থাকে। এসব রুগী যখন খুব চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করে-‘আমার অনেক
সমস্যা- মাসিক অনিয়মিত,হরমনের সমস্যা গায়ে লোম বেশি, ওভারিতে সিস্ট, আমার কি
বাচ্চা হবে’? অজান্তে বলে ফেলি-‘তোমার তেমন কোন সমস্যা নেই, তোমার বাচ্চা হবে।’
কারন এসব রুগীদের বাচ্চা হবার জন্য চিকিৎসা লাগে ঠিকই কিন্তু বাচ্চা হবার সম্ভাবনা
এদের খুব বেশি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড়া, বেশিরভাগ রুগী সামান্য চিকিৎসায়ই
গর্ভধারণ করতে সক্ষম হয়। এইসব রুগীদের মূল সমস্যা হচ্ছে প্রচুর ডিম্বাণু থাকা
সত্ত্বেও তাদের বাচ্চা হয় না ডিম্বানু পরিপক্ক ও ওভুলেশন না হওয়ার কারনে। সুতরাং
এদের চিকিৎসা হচ্ছে ওভুলেশন করানো। ওভুলেশন করানোর জন্য বহুধরনের ড্রাগ আমাদের
দেশে পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হল – এসব রুগীদের ওভুলেশন করানো একটা আর্ট-
পর্যাপ্ত জ্ঞান ও ব্যবহারিক শিক্ষা না থাকলে তা সম্ভব হয় না। এদের চিকিৎসা করতে হয়
ধাপে ধাপে। প্রতিটি ধাপে দরকার হয় মনিটরিং। আর সে মনিটরিং এর জন্য আবশ্যক একটি
আল্ট্রাসনোগ্রাম। যা থাকতে হবে গাইনোকলোজিস্টের হাতের কাছেই।কারো কারো শুধুমাত্র
একটা ড্রাগেই কাজ হয়, কারো দুইটা,কারো তিনটা, কারো লাগে ইঞ্জেকশন। কিছু কিছু
ক্ষেত্রে ল্যাপারস্কোপির দরকার হয়। খুব কম ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় উন্নত চিকিৎসার
যেমন- আই ইউ আই ও আই ভি এফ বা টেস্টটিউব বেবী। এছাড়া ওভুলেশন করার পাশাপাশি এদের
আরো কিছু চিকিৎসার দরকার হয়। যেমনঃ ওজন কমানো (ডায়েট ও এক্সারসাইজ), হরমনের সমস্যা
থাকলে তার চিকিৎসা, হাই প্রেসার থাকলে, ডায়েবেটিস থাকলে তার চিকিৎসা এবং সর্বোপরি
সবসময় ফলো আপ এ থাকা। কারন পরবর্তীতে এদের হাই প্রেসার, ডায়েবেটিস,হার্টের রোগ হবার
সম্ভাবনা থাকে।
এসব রুগীর চিকিৎসার সময় আর একটা ভুল অনেকক্ষেত্রে হয়ে থাকে, সেটা হচ্ছে স্বামীর
Semen Test করতে ভুলে যাওয়া। এসব মেয়েদের চিকিৎসার সময় পাশাপাশি অবশ্যই স্বামীর
Semen Test করে দেখতে হবে তার কোন সমস্যা আছে কিনা।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম’ রুগীদের চিকিৎসা খুবই আশাব্যঞ্জক, কিন্তু সঠিকভাবে
চিকিৎসা না করা গেলে রুগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। আমাদের দেশে ‘রেবা’-দের কাহিনীর
কোন অভাব নেই।
রেবার কাহিনী- রেবার বয়স এখন ২৭ বছর। বিয়ে হয়েছে ৫ বছর। বিয়ের
আগে থেকেই তার মাসিক অনিয়মিত। বিয়ের পর থেকেই সে বাচ্চা নেবার চেষ্টা করে। বাচ্চা পেটে
না আসায় ৬ মাস পর থেকেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া শুরু করে। প্রথম কিছুদিন সে বিভিন্ন ড্রাগ
খায় তার মাসিক নিয়মিত হবার জন্য- যেটা আসলে তার জন্য প্রযোজ্য না। তারপর শুরু হয় তার
ওভুলেশন করানোর ড্রাগ নেয়া। বছরের পর বছর সে clomiphine, Letrozole জাতীয় ড্রাগ খেয়ে
যায়, বিভিন্ন নামে বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছ থেকে। মাঝে মাঝে ইঞ্জেকশনও
নেয়। কিন্তু তার বাচ্চা আর পেটে আসে না। আমার কাছে আসার পর যখন আমি আবার আগের সেই ড্রাগ
দিলাম দেখার জন্য যে তার আগের ড্রাগে কাজ হয়েছিল কিনা। সে কিছুতেই আর সেসব নিতে চাইল
না। অনেক বোঝানোর পর এবং শুধু একবার দেব বলে সে রাজি হল। মনিটরিং করে দেখা গেল এতবছর
সে যত ড্রাগ খেয়েছে কোনটাতে তার ওভুলেশন হয় নাই। ওভুলেশন করানোর সেই আর্ট কাজে লাগিয়ে
একই ড্রাগ মাত্রা পরিবর্তন ও কিছু ড্রাগ যোগ করে তার ওভুলেশন করানো সম্ভব হল। একই চিকিৎসা
যখন তাকে ৬ মাসের জন্য দেয়া হল, ৩মাস পরেই সে গর্ভধারণ করে। গর্ভধারণের পর সে যখন আমার
কাছে আসে তখন তার মুখের দীপ্তিময় হাসি দেখে প্রথম দিনের সেই চেহারার সাথে মেলাতে পারি
না। রেবার মত এমন কাহিনী আমাদের নিত্যদিনের সাথী।