সন্তানহীনতার
জন্য প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রেই পুরষরা দায়ী। তাজ্জবের বিষয় হল যে মহিলাদের অনেকাংশেই
কারনগুলোর সাথে অনেক লক্ষন জড়িত থাকলেও পুরুষদের একমাত্র ইম্পোটেন্সি ছাড়া অন্য
কোন ক্ষেত্রে কোন লক্ষন থাকে না বললেই চলে। এজন্য পুরুষদের কারনগুলো অগোচরেই থেকে
যায়। কারনগুলোর মধ্যে অন্যতম হল
১। শুক্রানুর পরিমান কম।
২। শুক্রানুর গতিশীলতা কম।
৩। শুক্রানুর আকৃতি খারাপ।
৪। বীর্যে শুক্রানুর অনুপস্থিতি।
৫। মিলনে অক্ষম (ইম্পোটেন্সি)।
বীর্য পরীক্ষা ছাড়া প্রথম চারটি উদ্ঘাটন সম্ভব নয়। তাই চিকিৎসার প্রথম শর্ত হোল বীর্য পরীক্ষা।
চিকিৎসা সমূহঃ
১। লাইফ স্টাইল
পরিবর্তনঃ ধূমপান এবং মদসেবন বন্ধ, সুতি আন্ডারগার্মেন্টস ব্যবহার, গরম পরিবেশ
বর্জন, ফলমূল ও সতেজ সবজী খাওয়া ইত্যাদি।
২। কিছু কিছু ঔষধ যা শুক্রানুর সংখ্যা ও গতিশীলতা কমায় তা সেবন পরিহার করা।
সালফাস্যালাজিন, স্টেরয়ড, সাইমিটিডিন ইত্যাদি।
৩। কিছু এন্টিওক্সিড্যান্ট সেবন (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)।
৪। আই ইউ আই (শুক্রানুকে ল্যাবরেটরিতে প্রসেসিং করে শতভাগ গতিশীল শুক্রানু স্ত্রীর জরায়ুতে ট্রান্সফার করা)।
৫। টেস্ট টিউব চিকিৎসা ।
ক) আইভিএফঃ শুক্রানুর সংখ্যা ও গতিশীলতা কম হলে। এখানে পেট্রি ডিসে শুক্রানু ও ডীম্বানু মিশিয়ে দিয়ে ফারটিলাইজেশন করানো হয়। পরবর্তিতে ভ্রূন স্ত্রীর জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়।
খ) ইকসিঃ শুক্রানুর সংখ্যা ও গতিশীলতা অতিমাত্রায় কম হলে এবং বীর্যে শুক্রানু অনুপস্থিত থাকলে। বীর্যে শুক্রানু অনুপস্থিত থাকলে অপারেশনের মাধ্যমে অন্ডকোষ থেকে শুক্রানু বের করে ইকসি করা হওয়। একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে একটি শুক্রানুকে একটি ডিম্বানুর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। বাকী আই ভি এফ এর মত।
শুক্রানু সংরক্ষণঃ
শুক্রানু ভবিষ্যত ব্যবহারের জন্য সংরক্ষন করা সম্ভব যাকে বলে
ফ্রীজিং।
কি কি কারনে শুক্রানু ফ্রীজিং দরকার?
বিশেষ কারণঃ
১। যে কোন ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপী ও রেডিওথেরাপী দেবার
আগে সিমেন সঞ্চয়। কারন থেরাপীর জন্য টেস্টিকুলার ফেইলিওর হয়ে যায় বা যেতে পারে।
২। প্রয়োজনের তাগিদে স্বামী স্ত্রী দীর্ঘদিন আলাদা বসবাস করলে। (যেমন প্রবাসী
কর্মজীবি বা অধ্যয়নরত স্বামী)।
৩। এজোস্পার্মিক পুরুষদের বার বার সার্জারীর মাধ্যমে শুক্রানু বের করা থেকে নিষ্কৃতি পেতে প্রথম বারেই বেশী করে নিয়ে সঞ্চিত করা।
অপশনাল কারনঃ
১। ভ্যাসেকটমী করার আগে রাখা যেতে পারে, ভবিষ্যতে কখনও দুর্ঘটনাজনিত কারনে বাচ্চা নেবার প্রয়োজন হতে পারে।
২। উভয় দিকে ইঙ্গুইনাল হারনিয়া অপারেশনের আগে রাখা যেতে পারে। কারন একসিডেন্টালি উভয় ভাসডিফারেন্স বাঁধা পরে যেতে পারে।
যেভাবে করা হয়ঃ
সিমেন সমপরিমান ক্রায়োপ্রোটেক্ট্যান্ট (গ্লিসারোল) মিডিয়ার সাথে মিশিয়ে ছোট ছোট ভায়ালে নিয়ে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট লিকুয়িড নাইট্রোজেনের বাষ্পের মধ্যে রাখা হয়, ঠান্ডায় অভ্যস্ত করার জন্য। এর পরে ভায়ালগুলোকে মার্ক করে সনাক্তকারী পাত্রের মধ্যে করে মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার লিকুয়িড নাইট্রোজেনের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়। অনির্দৃষ্ট কালের জন্য এটিকে রাখা হলেও স্পার্ম জীবিত থাকবে। সর্বাধিক ২১ বছর ৫ মাস পরে ব্যবহার করে প্রেগন্যান্সি হয়েছে। ব্যবহারের সময়ে বের করে ১০ থেকে ১৫ মিনিট স্বাভাবিক রুম তাপমাত্রায় রেখে দিলে লিকুয়িড হবার সাথে সাথে অন্য মিডিয়া দিয়ে ক্রায়োপ্রোটেক্ট্যান্ট ওয়াস করে ব্যবহার করার জন্য তৈরী করা হয়। ফ্রজেন সিমেন দিয়ে ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন, আই ভি এফ ও ইকসি করা হয়।
ইকসি পুরুষ বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় এক বিপ্লব এনে দিয়েছে যা সব ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে পারে। কোন এক দম্পতি যদি এক বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে বাচ্চা গ্রহণের পরিকল্পনা নেয় এবং তারা একত্রে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করার পরও যদি তাদের কোন সন্তান না আসে তাহলে সেক্ষেত্রে ঐ দম্পতির জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন বলে ধরে নিতে হয়। এক জরিপে দেখা গেছে যে ২৫% নবদম্পতি বিয়ের পর প্রথম মাসেই সন্তান সম্ভবা হয়ে ওঠেন; যদি তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ না করে থাকেন। আরও দেখা গেছে বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে ৬৩ শতাংশ এবং ৮০ শতাংশ নয় মাসের মধ্যে এবং ৮৫ শতাংশের ক্ষেত্রে ১ বছরের মধ্যে সন্তানসম্ভবা হয়ে ওঠেন। তবে এখানে একটা কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। এখানে যে সংখ্যার কথা উল্লেখ করা হলো সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের নিয়মিত সেক্সোয়াল সম্পর্ক কোন রকম জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়াই থাকতে হবে। এক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষ উভয়কেই একত্রে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। এবং সর্বপ্রথমে পুরুষকেই তার শুক্রাণু পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে। প্রথম অবস্থায় স্ত্রীর পরীক্ষার করানো সমীচীন নয়। কারণ নারীর ক্ষেত্রে যে সমস্ত পরীক্ষা -নিরীক্ষা প্রয়োজন তা খুবই জটিল ও ব্যয় বহুল। কাজেই স্বামীর পরীক্ষায় যদি কোন দোষ না পাওয়া যায় তাহলে স্ত্রীর পরীক্ষাগুলো করানোর প্রয়োজনীয়তা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে। সাধারণভাবে একজন পুরুষ ৪০ মিলিয়ন থেকে ৩০০ মিলিয়ন শুক্রাণু নির্গত করে তবে সেই সংখ্যা যদি ২০ মিলিয়নের নিচে নেমে আসে তাহলে স্বাভাবিক নয় বলে বিবেচিত হবে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়া সন্তানের পিতা হওয়া প্রায় অসম্ভব বলেই ধরে নিতে হবে। অনেক ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞের মতে, নিঃসন্তান দম্পতিদের মধ্যে আনুমানিক ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তান না হওয়ার জন্য পুরুষরাই দায়ী এবং শতকরা দশ ভাগ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমস্যা থাকে। আবার অন্তত দশ ভাগ ক্ষেত্রে গর্ভধারণহীনতার কোন কারণই খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে বিশেষ করে শল্যচিকিৎসা পদ্ধতির কারণে এখন তাদের অনেকেই পিতা হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ইনট্রানসিস্টোপ্লাসমিক স্পার্ম ইনজেকশন পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য সাফল্যম-িত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে ল্যাবরেটরিতে রাখা ডিম্বাণুর মধ্যে শুক্রাণু সরাসরি প্রবেশ করানো হয়। অনেক পুরুষের ক্ষেত্রে আবার শুক্রাণু থাকে না সে ক্ষেত্রে অনেক পুরুষকেই দেখা যায় পুরুষটি ভাস নল ছাড়াই জন্মেছিল। এই নলটি না থাকার কারণে শুক্রাণু পাতলা কু-লি পাকানো যা ১৫ থেকে ২০ ফিট লম্বা টিউব যা ইপিডাইডাইমিস নামে পরিচিত সেখান থেকে বাইরে বাহিত হতে পারে না যা এখন শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে শুক্রাণু উদ্ধার করে তাকে ব্যবহার করতে পারেন। বিজ্ঞানীদের মধ্যে যে সমস্ত পুরুষের মধ্যে শুক্রাণু থাকে না তাদের মধ্যে জেনেটিক পরীক্ষাও প্রয়োজন, যার মাধ্যমে ক্রোমোজোম সমস্যা সম্পর্কে জানা যেতে পারে। পুরুষদের সন্তান না হওয়ার আর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ভেরিকোসিল যা অ-কোষের স্বাভাবিক শুক্রাণু উৎপাদনকে ব্যাহত করে। এই ভেরিকোসিল অপারেশনের পর অনেক দম্পতিই সন্তান জন্মদানে সক্ষম হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে শুক্রাণু সংখ্যায় কমে যাওয়ার কারণে যখন সন্তান না হয় সে ক্ষেত্রে শুক্রাণু সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে ডিম্বাণু নিষিক্তকরণে ব্যবহার করা হচ্ছে এখন।