পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা দুটো জিনিসকে সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য দিয়েছেন। সৃষ্টির নিয়ম রক্ষায় তিনি আবার সেই সৌন্দর্য দ্রুততম সময়ে কেড়েও নেন। তার একটি হলো ফুল আর অন্যটি নারী। ফুল ফুটতে ফুটতেই ঝরে যায় আর নারীর সৌন্দর্য বিকশিত হওয়ার পরও খুব বেশি দিন টিকে থাকে না। হয়তো এ জন্যই বলা হয়ে থাকে, মেয়েরা কুড়িতেই বুড়ি। কথাটি শহরের মেয়েদের জন্য প্রযোজ্য না হলেও গ্রামের মেয়েদের জন্য যথার্থ। আর শহুরে মেয়েরা? বিউটিশিয়ান, অ্যাস্থেটিক সার্জন, অ্যান্টি-এজিং ক্রিম ইত্যাদির বদৌলতে গ্ল্যামার রক্ষা করতে পারলেও তারাও দুই কুড়িতে নির্ঘাত বুড়ি। তবে কী শহর, কী গ্রাম- মন যতই চাঙ্গা থাকুক, চেহারা যতই অটুট থাকুক, প্রজননের ক্ষেত্রে ভেতরে ভেতরে সে বুড়ি। কেননা একটি মেয়ের প্রজননের বয়স সীমিত, যা পুরুষদের বেলায় ভিন্ন। থুরথুরে বুড়োরও সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা থাকে; কিন্তু বুড়ির থাকে না। নারী তাহলে দুই কুড়িতে বুড়ি কেন হয়?
একটি মেয়ে মায়ের জঠরে থাকা অবস্থায়ই সাত মিলিয়ন ডিম্বাণু বহন করে। ভূমিষ্ঠ হতে হতেই তার অর্ধেকেরও বেশি নষ্ট হয়ে যায়। এটাই প্রকৃতিগত নিয়ম। Programmed cell death : Atresia and apoptosis বিরামহীন চলতে থাকে। ফলে দুই মিলিয়ন ডিম্বাণু নিয়ে সে পৃথিবীতে আসে। আর যখন সাবালিকা হয়, তখন তার ডিম্বাণুর সংখ্যা থাকে মাত্র চার লাখ। এখান থেকে প্রতি মাসে একটি মাত্র ওভ্যুলেশন হলেও দুই থেকে আড়াই হাজার ডিম্বাণু নষ্ট হয়ে যায়। এই নষ্ট হওয়া চলতে থাকে প্রেগন্যান্সি এমনকি জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি খাওয়া অবস্থায়ও। অর্থাৎ কোনো কিছুই একে থামিয়ে রাখতে পারে না।
মোদ্দা কথা, যত বয়স হবে, ডিম্বাণুর সংখ্যা ততই কমতে থাকবে। এ ছাড়া সব ফুল থেকে যেমন ফল হয় না, তেমনি বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণুর গুণাগুণও কমতে থাকে। ফলে শুক্রাণুর সংস্পর্শে সব ডিম্বাণু ভ্রূণ তথা বাচ্চা তৈরি করে না। তাই ডিম্বাণুর গুণাগুণ কমতে থাকার কারণে গর্ভ সঞ্চারণের সম্ভাবনা যেমন একদিকে কমতে থাকে, তেমনি অন্যদিকে গর্ভপাতের এবং বিকলাঙ্গ সন্তান হওয়ার আশঙ্কাও বাড়তে থাকে। ৩০ বছরের পরে ডিম্বাণু দ্রুত নষ্ট হতে থাকে, ৩৫ থেকে আরো দ্রুত এবং ৪০ থেকে দ্রুততম গতিতে নষ্ট হয়ে যায়। এই গেল বয়সের সঙ্গে ডিম্বাণু ফুরিয়ে যাওয়ার সম্পর্ক। এটা ছাড়াও বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যাতে ডিম্বাণু নষ্ট হয়ে যায়। যার মধ্যে অন্যতম হলো ডিম্বাশয়ের চকোলেট সিস্ট। এই সিস্ট অপারেশনের ফলে প্রচণ্ড রকম ডিম্বাণু নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্যই ৩৫ বছর বয়সের আগেই ফ্যামিলি কমপ্লিট করা একান্ত বাঞ্ছনীয়। নারীদের জন্য সব ক্যারিয়ারের মধ্যে মাতৃত্ব সবচেয়ে বড় ক্যারিয়ার। তাই ভেবে দেখতে হবে, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তাই তো বলতে হয়, স্বামীর এবং নিজের পিএইচডি শেষ করে মিসেস দিলরুবা যখন বাচ্চা নিতে প্রস্তুত হলেন তখন গর্ভাশয় জানান দিল, এই ৪২ বছর পর্যন্ত তিনি আর ডিম্বাণু ধরে রাখতে পারেননি। মিসেস দিলরুবার স্বামী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মানুষের আবার ডিম থাকে নাকি? হ্যাঁ তো। সব প্রাণিকুলের জন্মই তো ডিম থেকে। কারো ডিম ফোটে শরীরের বাইরে, আর কারো ভেতরে।