যদি আপনার বয়স ৩৫ এর কম হয় এবং টানা এক বছর ধরে চেষ্টা করেও গর্ভবতী না হতে পারেন, তা হলে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা শুরু করা উচিত। কিন্তু বয়স ৩৫ পেরিয়ে যাওয়ার পর ছ’মাস চেষ্টা করেও গর্ভাধান না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। মা হওয়ার আদর্শ বয়সসীমা হচ্ছে ২৩-৩০ বছর। তার পর ডিম্বাণুর মান পড়তে থাকে ক্রমশ। তাই যাঁরা কেরিয়ারিস্ট এবং নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে বা সন্তানের স্বপ্ন দেখেন না, তাঁদের আমরা ডিম্বাণু ফ্রিজ় করে রাখার পরামর্শ দিই আজকাল। অল্প বয়সের সুস্থ, সবল ডিম্বাণু সংরক্ষিত থাকে, পরে ইচ্ছেমতো সেটা ব্যবহার করা যায়।
বন্ধ্যাত্বের নানা কারণ থাকে। কেবল নারী নয়, পুরুষেরও বন্ধ্যাত্ব থাকতে পারে। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে কয়েকটি সমস্যা থাকলে ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্বের আশঙ্কা তৈরি হয়। তার মধ্যে একেবারে প্রথমেই আসবে এন্ডোমেট্রিওসিস-এর নাম। ‘‘প্রাথমিক সমস্যা হচ্ছে পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা। সাধারণত এঁদের খুব বেশি রক্তপাত হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় ব্যাপারটাকে আমরা ‘প্রোগ্রেসিভলি ওয়ারসেনিং হেভি পেনফুল পিরিয়ড’ বলি। যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সময়েও এঁরা অস্বস্তিতে ভোগেন। এন্ডোমেট্রিওসিস বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ হতে পারে।’’ তা ছাডাও এই অসহ্য ব্যথাটা মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে কাবু করে ফেলে, পেশাদার জীবন তো বটেই, ব্যক্তিগত জীবনেও তার প্রভাব পড়ে। তার চেয়েও বড়ো সমস্যা হচ্ছে, যত দিন যায়, তত জটিলতা বাড়ে। ‘‘পেলভিক পেন আর ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জের সমস্যা থাকলেও কিন্তু সতর্ক হতে হবে, পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোনও পেলভিক ইনফেকশন আছে কিনা। ঋতুস্রাবের সময় পেলভিক ও তলপেট অঞ্চলে যন্ত্রণা হলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এগুলি পেলভিক এন্ডোমেট্রিওসিসের লক্ষণ,’’ । বলাই বাহুল্য, এটিও বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ।
জীবন থেকে প্লাস্টিক পুরোপুরি বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। বিশেষ করে টিফিন বাক্স, জলের বোতল, খাবার গরম করার পাত্র কোনওটাই যেন প্লাস্টিকের না হয়। প্লাস্টিকের সঙ্গে খাবারের, পানীয়ের বিক্রিয়া হয় এবং সেই কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনের ফল ভোগ করে আপনার শরীর, এটা কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রকাশিত ও প্রমাণিত সত্য। এমনকী খুব দামি বা ইম্পোর্টেড প্লাস্টিকের কন্টেনারও চলবে না। কাচের বোতলে জল রাখুন, স্টিলের টিফিনবাক্স থেকে টিফিন খান, ফ্রোজ়েন বা প্রসেসড খাবার চলবে না। এতে যে ধরনের প্রিজ়ারভেটিভস বা রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়, তা থেকে এন্ডোমেট্রিওসিসের সমস্যা বাড়ে।
সম্ভব হলে অরগ্যানিক ফল-সবজি খান। না পারলে বাজার থেকে কেনা কাঁচা আনাজ ও ফল-মূল ভালো করে ধুয়ে নিন পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের জলে।
জেনেটিকালি ইঞ্জিনিয়ারড, অর্থাৎ ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি তৈরি খাবারদাবার থেকে দূরে থাকুন।
স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং পরিমিত এক্সারসাইজ়ের কিন্তু কোনও বিকল্প নেই। শুনতে খুব ক্লিশে লাগবে হয়তো, কিন্তু এই দু’টি নিয়ম মেনে চললে অনেক সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়, প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে অন্তত চার ঘণ্টা ব্যায়াম করলে বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ কম থাকে, তাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে ইস্ট্রোজেনের উৎপাদন। ইস্ট্রোজেন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে এন্ডোমেট্রিওসিসও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
পলিসিস্টিক ওভারি
‘‘পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যায় ভুগলে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বের সমস্যা তো হয়ই, ভবিষ্যতে হাই কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসে ভোগার আশঙ্কাও থাকে। এটি একেবারেই লাইফস্টাইল ডিসঅর্ডার, একটু সচেতন হলেই সমস্যাটা এড়ানো সম্ভব। যত শিগগির সম্ভব ওজন কমান।’’ কীভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে কোনও সমস্যা আছে? সেটাও খুব কঠিন নয়। অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ, ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়া, তলপেটে ব্যথা বা ভারীভাব থাকলেই সতর্ক হোন। সমস্যা চলতে থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। বেশিদিন যদি আপনার অতিরিক্ত রক্তপাত হয়, তা হলে কিন্তু অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে। আচমকা খিদেবোধ হারালে বা ওজন কমতে আরম্ভ করলেও সতর্ক হোন।
যে কোনও অ্যাডিকশন বা নেশার সঙ্গে আমাদের শরীর অভ্যস্ত হয়ে পড়লে তার একটা কুফল পড়েই। আধুনিক জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেয়েরা বাইরে বেরিয়েছেন, তাঁদের জীবনে স্ট্রেস বেড়েছে। ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাঁরাও ধূমপান ও মদ্যপান করছেন। আর এর ফলটা খুব খারাপ হচ্ছে,’’ বলছেন ডা. লোধ। মানসিক চাপ পুরুষ ও মহিলা দুই ক্ষেত্রেই বিরাট বড়ো ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট কমতে আরম্ভ করে। শুক্রাণুর মানও পড়তে থাকে। মেয়েদের নানা রকম হরমোনের সমস্যায় পড়তে হয়। যৌন জীবনেও ছায়া ফেলে স্ট্রেসের ছাপ।
নিরাপদ ও দায়িত্বপূর্ণ যৌনতার অভ্যেস না থাকলে ভ্যাজাইনাল ও পেলভিক ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ‘‘একাধিক যৌনসঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করলে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন বা STI হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ক্ল্যামাইডিয়া নামের একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজ়িজ় হতে পারে। তা থেকে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যার ফলে বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়।’’ পারসোনাল হাইজিন সম্পর্কে সচেতন হোন, সুস্থ-স্বাভাবিক যৌনতায় আস্থা রাখুন। তাতে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা এড়াতে পারবেন।
ফাইব্রয়েডের সমস্যা ফাইব্রয়েড হল ইউটেরাসের সবচেয়ে ‘কমন’ টিউমার, সাধারণত সন্তান হয়নি যে সব মহিলার, তাঁদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। ‘‘ইউটেরাসের মাসল লেয়ার থেকে উৎপন্ন হয় এই ধরনের টিউমার, সিঙ্গল বা মাল্টিপল টিউমার হতে পারে। কখনও কখনও এটা ইউটেরাইন ক্যাভিটির মধ্যে থাকে, কখনও বাইরে বেরিয়ে আসে। সাধারণত এর ফলে প্রবল রক্তপাত হয় ঋতুস্রাবের সময়, কখনও কখনও পেটে ব্যথা থাকে। এর ফলে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।’’ প্রসঙ্গত, সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, আমাদের দেশে মহিলাদের অ্যানিমিয়ায় ভোগার অন্যতম প্রধান কারণই হচ্ছে ফাইব্রয়েডজনিত রক্তপাত। সারা বিশ্বের নিরিখে দেখলে হিস্টেরেক্টমির মাধ্যমে ইউটেরাস বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রথম কারণ হচ্ছে ফাইব্রয়েড। তবে সাধারণত এই ধরনের টিউমার থেকে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে না।
বন্ধ্যাত্বের আধুনিক চিকিৎসা সুখের বিষয় হচ্ছে, বন্ধ্যাত্বের অত্যাধুনিক চিকিৎসা বেরিয়ে গিয়েছে এবং তা ব্যবহার করে খুব ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত দু’ ভাবে চিকিৎসা করা হয়, প্রথমত জোর দেওয়া হয় জীবনযাত্রার পরিবর্তনে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, খাওয়াদাওয়া করতে হবে পরিমিত মাত্রায়। শারীরিক সুস্থতা নিয়ে কোনও সমস্যা না থাকলে সাধারণত গর্ভাধান সহজ হয়। যাঁরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করেন, তাঁদের শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি দেখা দেয় এবং তা থেকে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিন খোলা হাওয়ায় খানিকটা সময় কাটানোর অভ্যেস করুন। এর কোনওটাতেই কাজ না হলে সাহায্য নেওয়া হয় ওষুধপত্র ও অ্যাসিসটেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজির। অনেক সময় বন্ধ্যাত্বের কোনও সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, সেক্ষেত্রেও আইভিএফ ব্যবহার করা হয়। নারী বা পুরুষের বা দু’জনেরই সমস্যা থাকলে তো এই পদ্ধতি কাজে আসেই।
বন্ধ্যাত্বের সমস্যা কাটিয়ে সন্তানের জন্ম দিন
বিজ্ঞানের হাত ধরে টেস্ট টিউব বেবি ও সুপ্রজননবিদ্যার প্রয়োগে বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে এখন অনেক হতাশ-দম্পতি ‘বাবা’, ‘মা’ ডাক শুনে জীবনে পূর্ণতা ফিরে পাচ্ছেন। গত চার দশকে বিশ্বে ৫০ লাক্ষের বেশি শিশুর টেস্টটিউবে জন্ম হলেও এখনও অনেকের কাছেই নয়া চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যয়বহুল। তাই ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই শুধুমাত্র খরচের কারণে বন্ধ্যাত্ব দূর করে মা হওয়ার সুবিধা নিতে পারছেন না। আবার অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ বিষয়টি না জেনে শুধুমাত্র বেশি খরচ হবে ভেবেই এমন চিকিৎসা করান না। এটাই এখন অনেক বেশি কষ্ট, দুঃখেরও।
তবে আগের তুলনায় এখন কলকাতায় খরচ কিছুটা কম হয়েছে। কারণ, তিনটি। প্রথমত, আগের তুলনায় ওষুধ ও যন্ত্রপাতির দাম অনেকটা কম হওয়ায় চিকিৎসার খরচ কমেছে। দ্বিতীয়ত, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মান উন্নত হওয়ায় কম ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে। তৃতীয়ত, জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি ছাড়া শুধুমাত্র কাউন্সেলিং বা দু-একটা ওষুধ দিয়ে সহজে বাবা-মা হচ্ছেন অনেক দম্পতি। এছাড়াও আগের চেয়ে সংখ্যায় রোগী বেশি আসায় খরচ কম পড়ছে।
এবার বলা দরকার কে বা কারা চিকিৎসা করালে উপকৃত হবেন। (১) নারীর বয়স যদি ৩৮ বছরের বেশি হয় (২) পুরুষের জটিল সমস্যা থাকলে (৩) নারীর ডিম্বনালীতে যদি কোনও সমস্যা থাকে (৪) স্ত্রীর শরীরে মারাত্মক ধরনের এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে।
অভিজ্ঞতা বলছে, যে সমস্ত রোগী অল্প ওষুধেই চিকিৎসায় সাড়া দেন তাঁদের টেস্ট টিউব বেবি চিকিৎসার খরচ কমই হয়। আজকাল সামান্য ওষুধে হয়তো ডিম্বাণু কম তৈরি হয় কিন্তু তার গুণমান বেশ ভাল হয়। আবার অল্প ওষুধে ডিম্বাণু উৎপাদন হওয়ায় জরায়ুর দেওয়ালের ক্ষতি হয় না। আর তাই শুক্রাণুর সঙ্গে মিলনের পর ভ্রূণ তৈরি হলে সেটি প্রতিস্থাপনের পরেও জৈবিক নিয়মে জরায়ু সঠিকভাবে কাজ করে। তবে স্বল্প খরচে অল্পসংখ্যক ভ্রূণ তৈরি হওয়ায় গর্ভধারণের সাফল্য কিছুটা কম হয়।
সঠিক পরিমাণে ক্লোমিফেন সাইট্রেট ও কম পরিমাণে গোনাডোট্রপিন ইঞ্জেকশন স্বল্প খরচে খুব ভাল কাজ দিচ্ছে। বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় গোনাডোট্রপিন ও অ্যান্টাগনিস্ট এবং অ্যাগনিস্ট ট্রিগার দিয়ে তৈরি হওয়া ভ্রূণ প্রতিস্থাপন না করে হিমায়িত করে রেখে পরের মাসে প্রতিস্থাপন করলে ভাল সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে রোগীর শরীরে হরমোন নিঃসরণ থেকে শুরু করে জীবনশৈলীও বেশ খানিকটা প্রভাব ফেলে চিকিৎসায় সাফল্যর ক্ষেত্রে।
বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় সাফল্য কিন্তু রোগীর সহযোগিতা ও তথ্য প্রদানের মতো বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বিষয়গুলি হল (ক) বন্ধ্যাত্বের সময়সীমা এবং অতীতে কোনও প্রেগন্যান্সি এসেছিল বা নষ্ট হয়েছিল কি না। (খ) রোগিণীর বয়স, ওজন ও উচ্চতার সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য (বিএমআই) (গ) মাসিকের দুই বা তিনদিনে ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন ও অ্যান্টি মুলেরিয়ান হরমোন এবং ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুর ঘরের আকার-আয়তন ও পরিমাণ, (ঘ) জরায়ুর দেওয়ালের গুণগত মান ও ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের দিন।
এই চিকিৎসা যদি সমস্যার প্রথমাবস্থায় হয় তবে সাফল্যের হার অনেক বেশি। আবার অনেক দম্পতির ধারণা, এই চিকিৎসা না কি খুব যন্ত্রণাদায়ক এবং গর্ভাবস্থার পুরো সময়টাই নাকি বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। এই ধারণা ভুল। ডাক্তার হিসাবে আমায় প্রায় একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, ‘ডাক্তারবাবু, বাচ্চাটা সুস্থ-স্বাভাবিক হবে তো?’ অর্থাৎ অনেকের কাছে আজও প্রচলিত ভুল ধারণা হল সহায়ক বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় জন্মানো শিশুদের জন্মগত ত্রুটি থাকে।
চিকিৎসার একটা গোপন বিষয় জানাই, তাহলে ভুল ধারণা কিছুটা দূর হবে। অল্প ওষুধ দিয়ে ডিম্বাশয়কে উদ্দীপিত করলে এবং একটি মাত্র নির্বাচিত ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করলেই যমজ সন্তানের সমস্যা এড়ানো যায়। এই চিকিৎসায় শিশুর জন্মগত ত্রুটি খুব কম। কারণ, প্রতিস্থাপনের আগে ভ্রূণের ক্রোমোজমের পরীক্ষা হয়। জন্মগত ত্রুটির জন্য বেশিরভাগটাই দায়ী হচ্ছে বাবা বা মায়ের ক্রোমোজোমাল ত্রুটি। সমীক্ষা বলছে, যেসব দম্পতির ত্রুটিপূর্ণ সন্তান হয় তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স বেশি, চেহারা মোটা এবং রক্তচাপ, ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা আছে বা ডিম্বাণু, শুক্রাণুর গুণমান খুব খারাপ। ৪০ বছরের আশেপাশে বয়স আছে এমন একজন নারীর শরীরে যদি বড় মাপের কোনও জটিলতা না থাকে তবে বন্ধ্যাত্ব দূর করার প্রথমবারের চিকিৎসা এখন ৭০-৮০ হাজার টাকার মধ্যে হতে পারে। এক্ষেত্রে নিডল, ক্যাথিটার ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের জন্য ১৫ হাজার এবং ওষুধ লাগবে ৩০-৫০ হাজার টাকা। নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ১০-১৫ হাজার টাকা লাগছে। এছাড়াও ইউএসজি এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন হয়ে থাকে। সন্তানলাভে এখন ৭০-৮০ হাজার টাকা ধরলেও উন্নতমানের চিকিৎসার মাধ্যমে সাফল্য পেতে আনুমানিক এক লক্ষ টাকা খরচ পড়ছে। তবে ওই জ্যোতি আলুর দামে কখনওই চন্দ্রমুখী পাওয়া যায় না। ভাল ফলের জন্য একটু বেশি দাম দিতেই হয়। কিন্তু আমাদের একটা টার্গেট রয়েছে, তা হল অচিরেই বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে খরচ মাত্র ৫০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা। আমার স্থির বিশ্বাস, শীঘ্রই আইভিএফ-এর খরচ নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালে নিয়ে আসা খুব একটা কঠিন হবে না। এখন আমি জুনিয়র ডাক্তারদের ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ করে তুলছি। টার্গেট, যত দ্রুত সম্ভব বেশি সংখ্যায় বিশেষজ্ঞ তৈরি করে বাংলার চিকিৎসা জগতে ছড়িয়ে দেওয়া। এতে অনেক বেশি রোগীকে কম খরচে পরিষেবা দেওয়ার সুযোগ আসবে। তখন দেশের বহু মায়ের মুখে হাসি ফুটবে, পরিবারেও খুশির-হাওয়া আসবেই আসবে।