আমূল বদলে যাওয়া লাইফস্টাইল অন্যান্য অসুখবিসুখের সঙ্গে বাড়াচ্ছে বন্ধ্যাত্ব। বিশেষ করে পুরুষের ক্রমবর্ধমান বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ আমাদের রোজকার জীবনযাত্রা। এর ফলে শুক্রাণুর পরিমাণ কমার সঙ্গে সঙ্গে তার গুণগত মানও খারাপ হচ্ছে।
প্রথমেই বলে রাখি যে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা আর পুরুষত্বহীনতা কিন্তু এক নয়। সহবাসে অক্ষম পুরুষদের সন্তান উৎপাদন সত্যিই সমস্যার সৃষ্টি করে।
একই সঙ্গে সিমেনে স্পার্ম কাউন্ট কম থাকলে বা যথাযথ গতিশীল শুক্রাণুর পরিমাণ অপর্যাপ্ত থাকলে এবং শুক্রাণু নিঃসরণের পথে কোনও বাধা থাকলে ভ্রূণ তৈরি সম্ভব হয় না।
যত দোষ নন্দ ঘোষের মতোই বাবা হতে না পারার কারণ হিসেবেও দায়ী করা হয় গ্লোবাল ওয়ার্মিং তথা বিশ্ব ঊষ্ণায়নকে। তবে পুরুষের বন্ধ্যাত্বের এটাও একটা কারণ বটে। লাইফ স্টাইল মডিফিকেশনের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক চিকিৎসার সাহায্য নিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায় সহজেই। ভরসা দিলেন ক্রেডেল ফার্টিলটি সেন্টারের অধিকর্তা ডা এস এম রহমান।
আমূল বদলে যাওয়া লাইফস্টাইল অন্যান্য অসুখবিসুখের সঙ্গে বাড়াচ্ছে বন্ধ্যাত্ব। বিশেষ করে পুরুষের ক্রমবর্ধমান বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ আমাদের রোজকার জীবনযাত্রা। এর ফলে শুক্রাণুর পরিমাণ কমার সঙ্গে সঙ্গে তার গুণগত মানও খারাপ হচ্ছে। সাধারণত প্রতি সিসি সিমেনে ৮০ থেকে ১২০ মিলিয়ন গতিশীল স্পার্ম থাকলে পুরুষদের বাবা হতে কোনও অসুবিধে হয় না। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। এই সমস্যা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি উন্নত দেশেরই। সাধাতন ভাবে প্রতি সিসি সিমেনে কুড়ি মিলিয়ন (অর্থাৎ ২ কোটি) বা তার কিছুটা কম স্পার্ম থাকলেও পুরুষদের বাবা হতে কোনও অসুবিধে হবার কথা নয়। তবে শুক্রাণুর সংখ্যা কমতে কমতে দশ মিলিয়নের থেকেও কম হয়ে গেলে তখন সমস্যা হয়।
পুরুষদের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা ব্যহত হয় কেন প্রথমেই বলে রাখি যে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা আর পুরুষত্বহীনতা কিন্তু এক নয়। সহবাসে অক্ষম পুরুষদের সন্তান উৎপাদন সত্যিই সমস্যার সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে সিমেনে স্পার্ম কাউন্ট কম থাকলে বা যথাযথ গতিশীল শুক্রাণুর পরিমাণ অপর্যাপ্ত থাকলে এবং শুক্রাণু নিঃসরণের পথে কোনও বাধা থাকলে ভ্রূণ তৈরি সম্ভব হয় না। একে একে কারনগুলি জেনে নেওয়া যাক।
প্রায় ব্যাঙাচির মত দেখতে শুক্রাণুদের মাথার নিচে কিছু বিশেষ ধরনের শক্তি উৎপাদনকারী
রাসায়ানিক থাকে, যা এদের গতিশীল হতে সাহায্য করে। এই রাসায়ানিকের পরিমাণের তারতম্য
হলে অথবা নেকপিসের কোনও গঠনগত ত্রুটি থাকলে স্পার্মের গতিশীলতা কমে যায়। এমনকি শুক্রাণুর
টেল অর্থাৎ লেজের কোনও সমস্যা থাকলেও স্পার্ম এগিয়ে যেতে পারে না। গতিশীলতা মানে শুক্রাণু
তীব্র বেগে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। একই জায়গায় নড়াচড়া করা মানে গতিশীলতা নয়। রহমান
স্পার্মের মরফোলজি অর্থাৎ আকৃতি স্বাভাবিক না হলে নিষেক অর্থাৎ ভ্রূণ তৈরি সম্ভব নয়। কোনও সংক্রমণ ও যৌন রোগ থাকলে স্পার্মের সংখ্যা ও গতিশীলতা কমে যাবার সম্ভাবনা থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিমেনে স্পার্মের সংখ্যা ও গতিশীলতা ক্রমশ কমতে শুরু করে। মেয়েদের যেমন মেনোপজ হয়, তেমনই ছেলেদের অ্যান্ড্রোপজ হয়। তাই সঠিক সময়ে সন্তান উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিলে সমস্যায় পড়তে হয় না।ডায়বিটিস এবং হাইপারটেনশন হলে এবং তার সঠিক চিকিৎসা না হলে ইম্পোটেন্সি বা পুরুষত্বহীনতার সম্ভাবনা থাকে। স্পার্ম তৈরি ও নিষ্কাষণ পুরোপুরি নির্ভর করে হরমোনের কাজকর্মের ওপর। মস্তিষ্কের পিট্যুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত ফলিকল স্টিম্যুলেটিং হরমোন বা এফএসএইচ স্পার্মে পরিপূর্ণ করে। লিউট্যিনাইজিং হরমোন নামে আর একটি হরমোন টেস্টিসকে প্রভাবিত করে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরন নিঃসরণে সাহায্য করে। তাই যদি পিট্যুইটারি গ্রন্থির কোনও রকম সমস্যা হয়, তাহলে টেস্টিসের কাজকর্ম ব্যহত হবার সম্ভাবনা থাকে।
থাইরয়েড হরমোন স্পার্মকে পরিপূর্ণতা পেতে সাহায্য করে। থাইরয়েডের অসুখ করলে এবং তার ঠিকমত চিকিৎসা না হলে স্পার্মের সমস্যা ও বন্ধ্যাত্ব অনবার্য। যে সব জীবিকায় ছেলেদের খুব গরমের মধ্যে টানা কাজ করতে হয়, তাঁদের শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস পাবার সম্ভাবনা প্রবল। কেননা বেশি গরমে শুক্রাণুরা বাঁচতে পারে না। একই কারণে কোলের ওপর ল্যাপটপ নিয়ে নাগাড়ে কাজ করলেও স্পার্ম কাউন্ট কমে যাবার চান্স বাড়ে। কোনও ক্রনিক মানসিক রোগের ওষুধ খেতে হলে সাময়িক ভাবে স্পার্মের গোলোযোগ দেখা দিতে পারে।লাগাতার মানসিক চাপ, টেনশন, অ্যাংজাইটি এসবই ইনফার্টিলিটি ডেকে আনতে পারে। যথেচ্ছ ফাস্টফুড খাওয়া, রাতভর হোয়াটস অ্যাপ ফেসবুকে ব্যাস্ত থাকে এসবই বন্ধ্যাত্ব ডেকে আনে। বিশৃঙ্খল জীবন যাপন, প্রায়ই রাতে উদ্দাম পার্টি, মদ্যপান, ধূমপান নারী পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ। বাড়তি ওজন আর এক্সারসাইজের অভাব মেল ইনফার্টিলিটির এক অন্যতম কারণ। সঠিক চিকিৎসা করান কোনও দম্পতি বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা করাতে এলে তাঁদের কিছু টেস্ট করাতে দেওয়া হয়। পুরুষদের প্রাথমিক ভাবে সিমেন অ্যানালিসিস করতে দেওয়া হয়। স্পার্ম কাউন্টের সমস্যা থাকলে অন্যান্য পরীক্ষা করিয়ে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। জেনে আশ্বস্ত হবেন যে স্পার্ম কাউন্ট কম মানেই যে ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিতে হবে তা কিন্তু নয়। একটি মাত্র সুস্থ গতিশীল শুক্রাণু থাকলেও সন্তান কোলে তুলে নিতে পারেন ইকসির সাহায্যে। অর্থাৎ ইন্ট্রা সাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইঞ্জেকশন। বেশিরভাগ সমস্যাই সঠিক চিকিৎসার সাহায্যে সমাধান করা যায়।