Category: Uncategorized

February 14, 2020 by Site Admin 0 Comments

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রম হলে তাড়াতাড়ি বিয়ে নয়!

বহু তরুণীর অভিভাবকদের একটি ভ্রান্ত ধারণা থাকে যে বিয়ের পর পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রমের সমস্যা কেটে যাবে। আরও স্পষ্ট কথায় বললে, অনেকেই ভাবেন মেয়ে বাচ্চার জন্ম দিয়ে দিলে পলিসিস্টিকের জন্য আর কোনো টেনশন থাকবে না।

লাইফস্টাইল ও পরিবেশের পরিবর্তনের জন্য শহরের কিশোরী, তরুণীদের মধ্যে এই সিনড্রমে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে ঠিকই। তা বলে মেয়ের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলে পিসিওএস প্রতিরোধ করা যাবে এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। যুগ বদলেছে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে অহেতুক ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পলিসিস্টিক ওভারির চিকিৎসায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। পলিসিস্টিকের জন্য তাড়াতাড়ি বিয়ে করে গর্ভধারণ করার দরকার নেই। তবে ৩০ বছরের মধ্যে মা হয়ে যাওয়াই ভালো। তা না হলে অন্যান্য জটিলতা হতে পারে।

শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রম হয়। অনিয়মিত ঋতুস্রাব হলে ডিম্বাণু নিঃসরণ ঠিকমতো হয় না। এটা এমন কিছু সমস্যার বিষয় নয়। তা ছাড়া, পলিসিস্টিক ওভারি হলেই যে অপারেশন করতে হবে- এমন কোনো দরকার নেই।

সাবধান:

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা হলে ও অতিরিক্ত মোটা হলেই সতর্ক হোন তরুণীরা। এখন কম খেলাধুলা, শারীরিক পরিশ্রম ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের জন্য কমবয়সীদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তাই নির্ধারিত সময়ে পিরিয়ড না হলে, দু-তিন মাস ধরে না হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) বেড়ে গেলেই সাবধান হোন। আপনি ওবেসিটি আক্রান্ত কি না কিংবা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রমে ভুগছেন কি না তা আন্দাজ করতে পারবেন নিজেই।

চেক করে নিন বিএমআই: মোট ওজন (কিলোগ্রাম)/ উচ্চতা২ (মিটার) = বিএমআই। বিএমআই ১৮.৫-র কম = স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন, ১৮.৫-২৪.৯ = স্বাভাবিক ওজন, ২৫-২৯.৯ = অতিরিক্ত ওজন (সতর্ক হতে হবে), ৩০-এর বেশি = ওবেসিটি আক্রান্ত।

উপসর্গ:

অনিয়মিত পিরিয়ড, পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা, অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়া, চিবুক-ঠোঁটের ওপরের অংশে অবাঞ্ছিত লোম, মোটা হয়ে যাওয়া, ওবেসিটি আক্রান্ত হওয়া, থাইরয়েডের সমস্যা হওয়া।

ওজন কমান:

প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়মিত শরীরচর্চা আর সুষম খাদ্য খেয়েই পিসিওএস মোকাবিলা করা যায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। রোগীর অতিরিক্ত ওজন বাড়লে প্রথমেই তা কমাতে হবে। কোন ধরনের খাবার খাবেন ও কী কী খাবেন না, তা জানার জন্য অবশ্যই একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন। এক্সারসাইজ, ডায়েটিং ও জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণ করার ছ’মাস পর ফের গাইনোকলজিস্টের কাছে যান। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে ডাক্তার যদি দেখেন পিসিওএস-এর সমস্যা কমেছে, ঋতুচক্র স্বাভাবিক হয়েছে তাহলে এই পদ্ধতিই রোগীকে চালিয়ে যেতে হবে। সমস্যা থেকে গেলে কিছু ওরাল মেডিসিন, মূলত পিল দেওয়া হয়। এই পিল ঋতুচক্রকে নিয়মিত করে। ফলে ধীরে ধীরে সমস্যার সমাধান হতে শুরু হয়।

কুমারী-বিবাহিত যাই হোন না কেন ওরাল পিল সেবন করুন:
অনিয়মিত ঋতুচক্রকে নিয়মিত করতে ডাক্তাররা বেশ কিছু পিল দেন। ২৪ দিন পিল খাওয়ার পর চার দিন গ্যাপ দিয়ে ফের ২৪ দিন পিল খাওয়া যায়। এমন কিছু নতুন পিল পাওয়া যাচ্ছে যা এই চিকিৎসায় বেশ উপকারী। এছাড়া ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখতে Desogestrel, Gestodene, Drospirenone, Cyproterone যৌগযুক্ত কম ডোজের পিল ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ব্যবহার করা যায়। কুমারী মেয়েরাও এইসব পিল দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারেন। পিসিওএস-এ আক্রান্ত বিবাহিত মেয়েরাও এই পিল নিতে পারেন। এগুলি গর্ভনিরোধক হিসাবেও কাজ করে। তাই বিয়ের পরও এই ওরাল মেডিসিন দিয়ে দিব্যি চিকিৎসা চলে। ঋতুচক্র নিয়মিত হলে মহিলারা অনেকটাই মানসিক চাপমুক্ত থাকেন। তবে ছ’মাস অন্তর ডাক্তার দেখিয়ে পিসিওএস-এর গতিবিধি জেনে রাখা জরুরি।

মা হতে চাইলে:

প্রেগন্যান্সি চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওরাল মেডিসিন নেওয়া বন্ধ করতে হবে। এরপর যদি অন্তঃসত্ত্বা হতে কোনো অসুবিধা হয় তাহলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করে নিলেই সমস্যার সমাধান হবে। অনিয়মিত ডিম্বাণু বেরনোকে নিয়মিত করে দিলেই ভবিষ্যতে মা হতে আর কোনও অসুবিধা থাকবে না। তবে পলিসিস্টিকের সঙ্গে ওবেসিটি থাকলে বিষয়টি জটিল হতে পারে। তাই মা হতে চাইলে আগে ওজন কমাতে হবে। এই রোগীদের প্রেগন্যান্সির সময় ব্লাড সুগার ও ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে। এছাড়া অন্য সমস্যা হলে সিস্টগুলিকে পাংচার (ড্রিলিং) করে দেওয়া হয়। তাতে সাময়িকভাবে ডিম্বাণু নিঃসৃত হতে পারে। তবে এখন এত আধুনিক ওষুধ বেরিয়েছে যে ড্রিলিং করার দরকার হয় না।

সন্তানের জন্মের পর:

সন্তানের জন্মের পর অনেকেই পিসিওএস-এর চিকিৎসা ছেড়ে দেন। তখন অনেক ক্ষেত্রেই ফের পলিসিস্টিক ওভারি ফেরত আসে। অনেকে মোটা হয়ে যান, ব্লাড সুগার লেভেল বর্ডার লাইনে এসে যায়। সে রকম হলে দ্রুত ডাক্তার দেখিয়ে পিসিওএস-এর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। ব্লাড সুগারের জন্য মেটাফরমিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।

৪০-এর পর ডায়াবেটিস: নিয়মিত চিকিৎসা করালে এর কোনো সমস্যাই হয় না। কিন্তু এটাও ঠিক, রোগীর ৪০ বছর বয়সের পর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই থাকে। ওবেসিটি, কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেশারে ভোগার প্রবণতাও থাকে। তবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে এগুলো এড়ানো সম্ভব।

February 14, 2020 by Site Admin 0 Comments

নিঃসন্তান দম্পতিদের আধুনিক চিকিৎসা

কোন এক দম্পতি যদি এক বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে বাচ্চা গ্রহণের পরিকল্পনা নেয় এবং তারা একত্রে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করার পরও যদি তাদের কোন সন্তান না আসে তাহলে সেক্ষেত্রে ঐ দম্পতির জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন বলে ধরে নিতে হয়। এক জরিপে দেখা গেছে যে ২৫% নবদম্পতি বিয়ের পর প্রথম মাসেই সন্তান সম্ভবা হয়ে ওঠেন; যদি তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ না করে থাকেন। আরও দেখা গেছে বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে ৬৩ শতাংশ এবং ৮০ শতাংশ নয় মাসের মধ্যে এবং ৮৫ শতাংশের ক্ষেত্রে ১ বছরের মধ্যে সন্তানসম্ভবা হয়ে ওঠেন। তবে এখানে একটা কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। এখানে যে সংখ্যার কথা উল্লেখ করা হলো সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের নিয়মিত সেক্সোয়াল সম্পর্ক কোন রকম জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়াই থাকতে হবে। এক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষ উভয়কেই একত্রে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। এবং সর্বপ্রথমে পুরুষকেই তার শুক্রাণু পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে। প্রথম অবস্থায় স্ত্রীর পরীক্ষার করানো সমীচীন নয়। কারণ নারীর ক্ষেত্রে যে সমস্ত পরীক্ষা -নিরীক্ষা প্রয়োজন তা খুবই জটিল ও ব্যয় বহুল। কাজেই স্বামীর পরীক্ষায় যদি কোন দোষ না পাওয়া যায় তাহলে স্ত্রীর পরীক্ষাগুলো করানোর প্রয়োজনীয়তা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে। সাধারণভাবে একজন পুরুষ ৪০ মিলিয়ন থেকে৩০০ মিলিয়ন শুক্রাণু নির্গত করে তবে সেই সংখ্যা যদি ২০ মিলিয়নের নিচে নেমে আসে তাহলে স্বাভাবিক নয় বলে বিবেচিত হবে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়া সন্তানের পিতা হওয়া প্রায় অসম্ভব বলেই ধরে নিতে হবে। অনেক ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞের মতে, নিঃসন্তান দম্পতিদের মধ্যে আনুমানিক ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তান না হওয়ার জন্য পুরুষরাই দায়ী এবং শতকরা দশ ভাগ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমস্যা থাকে। আবার অন্তত দশ ভাগ ক্ষেত্রে গর্ভধারণহীনতার কোন কারণই খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে বিশেষ করে শল্যচিকিৎসা পদ্ধতির কারণে এখন তাদের অনেকেই পিতা হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ইনট্রানসিস্টোপ্লাসমিক স্পার্ম ইনজেকশন পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য সাফল্যম-িত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে ল্যাবরেটরিতে রাখা ডিম্বাণুর মধ্যে শুক্রাণু সরাসরি প্রবেশ করানো হয়। অনেক পুরুষের ক্ষেত্রে আবার শুক্রাণু থাকে না সে ক্ষেত্রে অনেক পুরুষকেই দেখা যায় পুরুষটি ভাস নল ছাড়াই জন্মেছিল। এই নলটি না থাকার কারণে শুক্রাণু পাতলা কু-লি পাকানো যা ১৫ থেকে ২০ ফিট লম্বা টিউব যা ইপিডাইডাইমিস নামে পরিচিত সেখান থেকে বাইরে বাহিত হতে পারে না যা এখন শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে শুক্রাণু উদ্ধার করে তাকে ব্যবহার করতে পারেন। বিজ্ঞানীদের মধ্যে যে সমস্ত পুরুষের মধ্যে শুক্রাণু থাকে না তাদের মধ্যে জেনেটিক পরীক্ষাও প্রয়োজন, যার মাধ্যমে ক্রোমোজোম সমস্যা সম্পর্কে জানা যেতে পারে। পুরুষদের সন্তান না হওয়ার আর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ভেরিকোসিল যা অ-কোষের স্বাভাবিক শুক্রাণু উৎপাদনকে ব্যাহত করে। এই ভেরিকোসিল অপারেশনের পর অনেক দম্পতিই সন্তান জন্মদানে সক্ষম হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে শুক্রাণু সংখ্যায় কমে যাওয়ার কারণে যখন সন্তান না হয় সে ক্ষেত্রে শুক্রাণু সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে ডিম্বাণু নিষিক্তকরণে ব্যবহার করা হচ্ছে এখন।

অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা যথেষ্ট ডিম উৎপাদনে সক্ষম নাও হতে পারে সে ক্ষেত্রে হরমোন চিকিৎসায় ভাল ডিম্ব উৎপন্ন হতে পারে এবং এই ডিম্বে একটি একক শুক্রাণু সরাসরি ইনজেকশনের মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এবং ডিমগুলো পরে স্ত্রী জরায়ুতে পুনরায় হস্তান্তর করা হয়। দেখা গেছে অনেক ক্ষেত্রেই সুস্থ-স্বাভাবিক শুক্রানণু তৈরির জন্য হরমোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই হরমোন ব্যবহারের ফলে শুক্রাণুর পরিমাণ ২ গুণ পর্যন্তও বৃদ্ধি পেয়েছে। আরও দেখা গেছে যাদের শুক্রাণুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে এই হরমোন ঋ.ঝ.ঐ ব্যবহারে শুক্রাণু বর্ধন, বিস্তার স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। এক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, শুক্রাণুর স্বাভাবিক তৈরি হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট হরমোন তৈরি এর দুটোই আবার নিয়ন্ত্রিত হয় (ক) Pituitary Gland দ্বারা অর্থাৎ খ. H. Avi F.S.H. এর দ্বারা। পুরুষের ক্ষেত্রে বন্ধ্যত্বের অসংখ্য কারণ আছে। তবে প্রধানত তাকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন Pretesticular অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে Pitutary gland (গ্রন্থি) অথবা Hypothalamus এর কারণে অস্বাভাবিক শুক্রাকিট তৈরি হয়।

(খ) Testicular বা অ-কোষের কারণে যখন পুরুষের বন্ধ্যত্ব দেখা দেয় তখন অজ্ঞাত কারণে শুক্রকিটের পরিমাণে অস্বাভাবিক রকম কমে যায়। এবং এর আনুপাতিক সংখ্যা অন্ততপক্ষে মোট সংখ্যার ২৫ শতাংশ। এর বাইরে আর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে (গ) PW়st Testicular অর্থাৎ এক্ষেত্রে শুক্রকিট বাহিত হওয়ার পথ সংকুচিত অথবা বন্ধ থাকে অথবা শুক্রকিটের বিচরণ বা চলাচলের ক্ষমতা কমে যায় অথবা শুক্রকিট ধ্বংস করে দেয়ার মতো কোন অহঃরনড়ফু শরীরে তৈরি হয় যা শুক্রাণুকে ধ্বংস করে দেয়।

ডা. দিদারুল আহসান

এমবিবিএস ডিডিভি (অস্ট্রিয়া)

ফেলো, আরএস এইচ (লন্ডন) চর্ম-এলার্জি ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ

February 14, 2020 by Site Admin 0 Comments

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (PCOS or PCOD)

বাচ্চা না হবার জন্য যেসব মেয়েরা আমাদের কাছে আসে, তাদের একটা বড় অংশ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রম রোগে ভুগে থাকে। এসব রুগী যখন খুব চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করে-‘আমার অনেক সমস্যা- মাসিক অনিয়মিত,হরমনের সমস্যা গায়ে লোম বেশি, ওভারিতে সিস্ট, আমার কি বাচ্চা হবে’? অজান্তে বলে ফেলি-‘তোমার তেমন কোন সমস্যা নেই, তোমার বাচ্চা হবে।’ কারন এসব রুগীদের বাচ্চা হবার জন্য চিকিৎসা লাগে ঠিকই কিন্তু বাচ্চা হবার সম্ভাবনা এদের খুব বেশি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড়া, বেশিরভাগ রুগী সামান্য চিকিৎসায়ই গর্ভধারণ করতে সক্ষম হয়। এইসব রুগীদের মূল সমস্যা হচ্ছে প্রচুর ডিম্বাণু থাকা সত্ত্বেও তাদের বাচ্চা হয় না ডিম্বানু পরিপক্ক ও ওভুলেশন না হওয়ার কারনে। সুতরাং এদের চিকিৎসা হচ্ছে ওভুলেশন করানো। ওভুলেশন করানোর জন্য বহুধরনের ড্রাগ আমাদের দেশে পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হল – এসব রুগীদের ওভুলেশন করানো একটা আর্ট- পর্যাপ্ত জ্ঞান ও ব্যবহারিক শিক্ষা না থাকলে তা সম্ভব হয় না। এদের চিকিৎসা করতে হয় ধাপে ধাপে। প্রতিটি ধাপে দরকার হয় মনিটরিং। আর সে মনিটরিং এর জন্য আবশ্যক একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম। যা থাকতে হবে গাইনোকলোজিস্টের হাতের কাছেই।কারো কারো শুধুমাত্র একটা ড্রাগেই কাজ হয়, কারো দুইটা,কারো তিনটা, কারো লাগে ইঞ্জেকশন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ল্যাপারস্কোপির দরকার হয়। খুব কম ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় উন্নত চিকিৎসার যেমন- আই ইউ আই ও আই ভি এফ বা টেস্টটিউব বেবী। এছাড়া ওভুলেশন করার পাশাপাশি এদের আরো কিছু চিকিৎসার দরকার হয়। যেমনঃ ওজন কমানো (ডায়েট ও এক্সারসাইজ), হরমনের সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা, হাই প্রেসার থাকলে, ডায়েবেটিস থাকলে তার চিকিৎসা এবং সর্বোপরি সবসময় ফলো আপ এ থাকা। কারন পরবর্তীতে এদের হাই প্রেসার, ডায়েবেটিস,হার্টের রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে।
এসব রুগীর চিকিৎসার সময় আর একটা ভুল অনেকক্ষেত্রে হয়ে থাকে, সেটা হচ্ছে স্বামীর Semen Test করতে ভুলে যাওয়া। এসব মেয়েদের চিকিৎসার সময় পাশাপাশি অবশ্যই স্বামীর Semen Test করে দেখতে হবে তার কোন সমস্যা আছে কিনা।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম’ রুগীদের চিকিৎসা খুবই আশাব্যঞ্জক, কিন্তু সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা গেলে রুগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। আমাদের দেশে ‘রেবা’-দের কাহিনীর কোন অভাব নেই। রেবার কাহিনী- রেবার বয়স এখন ২৭ বছর। বিয়ে হয়েছে ৫ বছর। বিয়ের আগে থেকেই তার মাসিক অনিয়মিত। বিয়ের পর থেকেই সে বাচ্চা নেবার চেষ্টা করে। বাচ্চা পেটে না আসায় ৬ মাস পর থেকেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া শুরু করে। প্রথম কিছুদিন সে বিভিন্ন ড্রাগ খায় তার মাসিক নিয়মিত হবার জন্য- যেটা আসলে তার জন্য প্রযোজ্য না। তারপর শুরু হয় তার ওভুলেশন করানোর ড্রাগ নেয়া। বছরের পর বছর সে clomiphine, Letrozole জাতীয় ড্রাগ খেয়ে যায়, বিভিন্ন নামে বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছ থেকে। মাঝে মাঝে ইঞ্জেকশনও নেয়। কিন্তু তার বাচ্চা আর পেটে আসে না। আমার কাছে আসার পর যখন আমি আবার আগের সেই ড্রাগ দিলাম দেখার জন্য যে তার আগের ড্রাগে কাজ হয়েছিল কিনা। সে কিছুতেই আর সেসব নিতে চাইল না। অনেক বোঝানোর পর এবং শুধু একবার দেব বলে সে রাজি হল। মনিটরিং করে দেখা গেল এতবছর সে যত ড্রাগ খেয়েছে কোনটাতে তার ওভুলেশন হয় নাই। ওভুলেশন করানোর সেই আর্ট কাজে লাগিয়ে একই ড্রাগ মাত্রা পরিবর্তন ও কিছু ড্রাগ যোগ করে তার ওভুলেশন করানো সম্ভব হল। একই চিকিৎসা যখন তাকে ৬ মাসের জন্য দেয়া হল, ৩মাস পরেই সে গর্ভধারণ করে। গর্ভধারণের পর সে যখন আমার কাছে আসে তখন তার মুখের দীপ্তিময় হাসি দেখে প্রথম দিনের সেই চেহারার সাথে মেলাতে পারি না। রেবার মত এমন কাহিনী আমাদের নিত্যদিনের সাথী।

February 13, 2020 by Site Admin 0 Comments

বন্ধ্যাত্ব আগে বোঝার উপায় আছে?

যদি আপনার বয়স ৩৫ এর কম হয় এবং টানা এক বছর ধরে চেষ্টা করেও গর্ভবতী না হতে পারেন, তা হলে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা শুরু করা উচিত। কিন্তু বয়স ৩৫ পেরিয়ে যাওয়ার পর ছ’মাস চেষ্টা করেও গর্ভাধান না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। মা হওয়ার আদর্শ বয়সসীমা হচ্ছে ২৩-৩০ বছর। তার পর ডিম্বাণুর মান পড়তে থাকে ক্রমশ। তাই যাঁরা কেরিয়ারিস্ট এবং নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে বা সন্তানের স্বপ্ন দেখেন না, তাঁদের আমরা ডিম্বাণু ফ্রিজ় করে রাখার পরামর্শ দিই আজকাল। অল্প বয়সের সুস্থ, সবল ডিম্বাণু সংরক্ষিত থাকে, পরে ইচ্ছেমতো সেটা ব্যবহার করা যায়।

বন্ধ্যাত্বের নানা কারণ থাকে। কেবল নারী নয়, পুরুষেরও বন্ধ্যাত্ব থাকতে পারে। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে কয়েকটি সমস্যা থাকলে ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্বের আশঙ্কা তৈরি হয়। তার মধ্যে একেবারে প্রথমেই আসবে এন্ডোমেট্রিওসিস-এর নাম। ‘‘প্রাথমিক সমস্যা হচ্ছে পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা। সাধারণত এঁদের খুব বেশি রক্তপাত হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় ব্যাপারটাকে আমরা ‘প্রোগ্রেসিভলি ওয়ারসেনিং হেভি পেনফুল পিরিয়ড’ বলি। যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সময়েও এঁরা অস্বস্তিতে ভোগেন। এন্ডোমেট্রিওসিস বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ হতে পারে।’’ তা ছাডাও এই অসহ্য ব্যথাটা মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে কাবু করে ফেলে, পেশাদার জীবন তো বটেই, ব্যক্তিগত জীবনেও তার প্রভাব পড়ে। তার চেয়েও বড়ো সমস্যা হচ্ছে, যত দিন যায়, তত জটিলতা বাড়ে। ‘‘পেলভিক পেন আর ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জের সমস্যা থাকলেও কিন্তু সতর্ক হতে হবে, পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোনও পেলভিক ইনফেকশন আছে কিনা। ঋতুস্রাবের সময় পেলভিক ও তলপেট অঞ্চলে যন্ত্রণা হলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এগুলি পেলভিক এন্ডোমেট্রিওসিসের লক্ষণ,’’ । বলাই বাহুল্য, এটিও বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ।

জীবন থেকে প্লাস্টিক পুরোপুরি বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। বিশেষ করে টিফিন বাক্স, জলের বোতল, খাবার গরম করার পাত্র কোনওটাই যেন প্লাস্টিকের না হয়। প্লাস্টিকের সঙ্গে খাবারের, পানীয়ের বিক্রিয়া হয় এবং সেই কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনের ফল ভোগ করে আপনার শরীর, এটা কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রকাশিত ও প্রমাণিত সত্য। এমনকী খুব দামি বা ইম্পোর্টেড প্লাস্টিকের কন্টেনারও চলবে না। কাচের বোতলে জল রাখুন, স্টিলের টিফিনবাক্স থেকে টিফিন খান, ফ্রোজ়েন বা প্রসেসড খাবার চলবে না। এতে যে ধরনের প্রিজ়ারভেটিভস বা রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়, তা থেকে এন্ডোমেট্রিওসিসের সমস্যা বাড়ে।

সম্ভব হলে অরগ্যানিক ফল-সবজি খান। না পারলে বাজার থেকে কেনা কাঁচা আনাজ ও ফল-মূল ভালো করে ধুয়ে নিন পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের জলে।

জেনেটিকালি ইঞ্জিনিয়ারড, অর্থাৎ ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি তৈরি খাবারদাবার থেকে দূরে থাকুন।

স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং পরিমিত এক্সারসাইজ়ের কিন্তু কোনও বিকল্প নেই। শুনতে খুব ক্লিশে লাগবে হয়তো, কিন্তু এই দু’টি নিয়ম মেনে চললে অনেক সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়, প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে অন্তত চার ঘণ্টা ব্যায়াম করলে বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ কম থাকে, তাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে ইস্ট্রোজেনের উৎপাদন। ইস্ট্রোজেন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে এন্ডোমেট্রিওসিসও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

পলিসিস্টিক ওভারি

‘‘পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যায় ভুগলে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বের সমস্যা তো হয়ই, ভবিষ্যতে হাই কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসে ভোগার আশঙ্কাও থাকে। এটি একেবারেই লাইফস্টাইল ডিসঅর্ডার, একটু সচেতন হলেই সমস্যাটা এড়ানো সম্ভব। যত শিগগির সম্ভব ওজন কমান।’’ কীভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে কোনও সমস্যা আছে? সেটাও খুব কঠিন নয়। অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ, ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়া, তলপেটে ব্যথা বা ভারীভাব থাকলেই সতর্ক হোন। সমস্যা চলতে থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। বেশিদিন যদি আপনার অতিরিক্ত রক্তপাত হয়, তা হলে কিন্তু অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে। আচমকা খিদেবোধ হারালে বা ওজন কমতে আরম্ভ করলেও সতর্ক হোন।

যে কোনও অ্যাডিকশন বা নেশার সঙ্গে আমাদের শরীর অভ্যস্ত হয়ে পড়লে তার একটা কুফল পড়েই। আধুনিক জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেয়েরা বাইরে বেরিয়েছেন, তাঁদের জীবনে স্ট্রেস বেড়েছে। ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাঁরাও ধূমপান ও মদ্যপান করছেন। আর এর ফলটা খুব খারাপ হচ্ছে,’’ বলছেন ডা. লোধ। মানসিক চাপ পুরুষ ও মহিলা দুই ক্ষেত্রেই বিরাট বড়ো ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট কমতে আরম্ভ করে। শুক্রাণুর মানও পড়তে থাকে। মেয়েদের নানা রকম হরমোনের সমস্যায় পড়তে হয়। যৌন জীবনেও ছায়া ফেলে স্ট্রেসের ছাপ।

নিরাপদ ও দায়িত্বপূর্ণ যৌনতার অভ্যেস না থাকলে ভ্যাজাইনাল ও পেলভিক ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ‘‘একাধিক যৌনসঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করলে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন বা STI হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ক্ল্যামাইডিয়া নামের একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজ়িজ় হতে পারে। তা থেকে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যার ফলে বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়।’’ পারসোনাল হাইজিন সম্পর্কে সচেতন হোন, সুস্থ-স্বাভাবিক যৌনতায় আস্থা রাখুন। তাতে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা এড়াতে পারবেন।

ফাইব্রয়েডের সমস্যা ফাইব্রয়েড হল ইউটেরাসের সবচেয়ে ‘কমন’ টিউমার, সাধারণত সন্তান হয়নি যে সব মহিলার, তাঁদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। ‘‘ইউটেরাসের মাসল লেয়ার থেকে উৎপন্ন হয় এই ধরনের টিউমার, সিঙ্গল বা মাল্টিপল টিউমার হতে পারে। কখনও কখনও এটা ইউটেরাইন ক্যাভিটির মধ্যে থাকে, কখনও বাইরে বেরিয়ে আসে। সাধারণত এর ফলে প্রবল রক্তপাত হয় ঋতুস্রাবের সময়, কখনও কখনও পেটে ব্যথা থাকে। এর ফলে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।’’ প্রসঙ্গত, সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, আমাদের দেশে মহিলাদের অ্যানিমিয়ায় ভোগার অন্যতম প্রধান কারণই হচ্ছে ফাইব্রয়েডজনিত রক্তপাত। সারা বিশ্বের নিরিখে দেখলে হিস্টেরেক্টমির মাধ্যমে ইউটেরাস বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রথম কারণ হচ্ছে ফাইব্রয়েড। তবে সাধারণত এই ধরনের টিউমার থেকে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে না।

বন্ধ্যাত্বের আধুনিক চিকিৎসা সুখের বিষয় হচ্ছে, বন্ধ্যাত্বের অত্যাধুনিক চিকিৎসা বেরিয়ে গিয়েছে এবং তা ব্যবহার করে খুব ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত দু’ ভাবে চিকিৎসা করা হয়, প্রথমত জোর দেওয়া হয় জীবনযাত্রার পরিবর্তনে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, খাওয়াদাওয়া করতে হবে পরিমিত মাত্রায়। শারীরিক সুস্থতা নিয়ে কোনও সমস্যা না থাকলে সাধারণত গর্ভাধান সহজ হয়। যাঁরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করেন, তাঁদের শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি দেখা দেয় এবং তা থেকে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিন খোলা হাওয়ায় খানিকটা সময় কাটানোর অভ্যেস করুন। এর কোনওটাতেই কাজ না হলে সাহায্য নেওয়া হয় ওষুধপত্র ও অ্যাসিসটেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজির। অনেক সময় বন্ধ্যাত্বের কোনও সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, সেক্ষেত্রেও আইভিএফ ব্যবহার করা হয়। নারী বা পুরুষের বা দু’জনেরই সমস্যা থাকলে তো এই পদ্ধতি কাজে আসেই।

বন্ধ্যাত্বের সমস্যা কাটিয়ে সন্তানের জন্ম দিন

বিজ্ঞানের হাত ধরে টেস্ট টিউব বেবি ও সুপ্রজননবিদ্যার প্রয়োগে বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে এখন অনেক হতাশ-দম্পতি ‘বাবা’, ‘মা’ ডাক শুনে জীবনে পূর্ণতা ফিরে পাচ্ছেন। গত চার দশকে বিশ্বে ৫০ লাক্ষের বেশি শিশুর টেস্টটিউবে জন্ম হলেও এখনও অনেকের কাছেই নয়া চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যয়বহুল। তাই ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই শুধুমাত্র খরচের কারণে বন্ধ্যাত্ব দূর করে মা হওয়ার সুবিধা নিতে পারছেন না। আবার অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ বিষয়টি না জেনে শুধুমাত্র বেশি খরচ হবে ভেবেই এমন চিকিৎসা করান না। এটাই এখন অনেক বেশি কষ্ট, দুঃখেরও।

তবে আগের তুলনায় এখন কলকাতায় খরচ কিছুটা কম হয়েছে। কারণ, তিনটি। প্রথমত, আগের তুলনায় ওষুধ ও যন্ত্রপাতির দাম অনেকটা কম হওয়ায় চিকিৎসার খরচ কমেছে। দ্বিতীয়ত, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মান উন্নত হওয়ায় কম ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে। তৃতীয়ত, জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি ছাড়া শুধুমাত্র কাউন্সেলিং বা দু-একটা ওষুধ দিয়ে সহজে বাবা-মা হচ্ছেন অনেক দম্পতি। এছাড়াও আগের চেয়ে সংখ্যায় রোগী বেশি আসায় খরচ কম পড়ছে।

এবার বলা দরকার কে বা কারা চিকিৎসা করালে উপকৃত হবেন। (১) নারীর বয়স যদি ৩৮ বছরের বেশি হয় (২) পুরুষের জটিল সমস্যা থাকলে (৩) নারীর ডিম্বনালীতে যদি কোনও সমস্যা থাকে (৪) স্ত্রীর শরীরে মারাত্মক ধরনের এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে।

অভিজ্ঞতা বলছে, যে সমস্ত রোগী অল্প ওষুধেই চিকিৎসায় সাড়া দেন তাঁদের টেস্ট টিউব বেবি চিকিৎসার খরচ কমই হয়। আজকাল সামান্য ওষুধে হয়তো ডিম্বাণু কম তৈরি হয় কিন্তু তার গুণমান বেশ ভাল হয়। আবার অল্প ওষুধে ডিম্বাণু উৎপাদন হওয়ায় জরায়ুর দেওয়ালের ক্ষতি হয় না। আর তাই শুক্রাণুর সঙ্গে মিলনের পর ভ্রূণ তৈরি হলে সেটি প্রতিস্থাপনের পরেও জৈবিক নিয়মে জরায়ু সঠিকভাবে কাজ করে। তবে স্বল্প খরচে অল্পসংখ্যক ভ্রূণ তৈরি হওয়ায় গর্ভধারণের সাফল্য কিছুটা কম হয়।

সঠিক পরিমাণে ক্লোমিফেন সাইট্রেট ও কম পরিমাণে গোনাডোট্রপিন ইঞ্জেকশন স্বল্প খরচে খুব ভাল কাজ দিচ্ছে। বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় গোনাডোট্রপিন ও অ্যান্টাগনিস্ট এবং অ্যাগনিস্ট ট্রিগার দিয়ে তৈরি হওয়া ভ্রূণ প্রতিস্থাপন না করে হিমায়িত করে রেখে পরের মাসে প্রতিস্থাপন করলে ভাল সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে রোগীর শরীরে হরমোন নিঃসরণ থেকে শুরু করে জীবনশৈলীও বেশ খানিকটা প্রভাব ফেলে চিকিৎসায় সাফল্যর ক্ষেত্রে।

বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় সাফল্য কিন্তু রোগীর সহযোগিতা ও তথ্য প্রদানের মতো বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বিষয়গুলি হল (ক) বন্ধ্যাত্বের সময়সীমা এবং অতীতে কোনও প্রেগন্যান্সি এসেছিল বা নষ্ট হয়েছিল কি না। (খ) রোগিণীর বয়স, ওজন ও উচ্চতার সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য (বিএমআই) (গ) মাসিকের দুই বা তিনদিনে ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন ও অ্যান্টি মুলেরিয়ান হরমোন এবং ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুর ঘরের আকার-আয়তন ও পরিমাণ, (ঘ) জরায়ুর দেওয়ালের গুণগত মান ও ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের দিন।

এই চিকিৎসা যদি সমস্যার প্রথমাবস্থায় হয় তবে সাফল্যের হার অনেক বেশি। আবার অনেক দম্পতির ধারণা, এই চিকিৎসা না কি খুব যন্ত্রণাদায়ক এবং গর্ভাবস্থার পুরো সময়টাই নাকি বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। এই ধারণা ভুল। ডাক্তার হিসাবে আমায় প্রায় একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, ‘ডাক্তারবাবু, বাচ্চাটা সুস্থ-স্বাভাবিক হবে তো?’ অর্থাৎ অনেকের কাছে আজও প্রচলিত ভুল ধারণা হল সহায়ক বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় জন্মানো শিশুদের জন্মগত ত্রুটি থাকে।

চিকিৎসার একটা গোপন বিষয় জানাই, তাহলে ভুল ধারণা কিছুটা দূর হবে। অল্প ওষুধ দিয়ে ডিম্বাশয়কে উদ্দীপিত করলে এবং একটি মাত্র নির্বাচিত ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করলেই যমজ সন্তানের সমস্যা এড়ানো যায়। এই চিকিৎসায় শিশুর জন্মগত ত্রুটি খুব কম। কারণ, প্রতিস্থাপনের আগে ভ্রূণের ক্রোমোজমের পরীক্ষা হয়। জন্মগত ত্রুটির জন্য বেশিরভাগটাই দায়ী হচ্ছে বাবা বা মায়ের ক্রোমোজোমাল ত্রুটি। সমীক্ষা বলছে, যেসব দম্পতির ত্রুটিপূর্ণ সন্তান হয় তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স বেশি, চেহারা মোটা এবং রক্তচাপ, ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা আছে বা ডিম্বাণু, শুক্রাণুর গুণমান খুব খারাপ। ৪০ বছরের আশেপাশে বয়স আছে এমন একজন নারীর শরীরে যদি বড় মাপের কোনও জটিলতা না থাকে তবে বন্ধ্যাত্ব দূর করার প্রথমবারের চিকিৎসা এখন ৭০-৮০ হাজার টাকার মধ্যে হতে পারে। এক্ষেত্রে নিডল, ক্যাথিটার ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের জন্য ১৫ হাজার এবং ওষুধ লাগবে ৩০-৫০ হাজার টাকা। নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ১০-১৫ হাজার টাকা লাগছে। এছাড়াও ইউএসজি এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন হয়ে থাকে। সন্তানলাভে এখন ৭০-৮০ হাজার টাকা ধরলেও উন্নতমানের চিকিৎসার মাধ্যমে সাফল্য পেতে আনুমানিক এক লক্ষ টাকা খরচ পড়ছে। তবে ওই জ্যোতি আলুর দামে কখনওই চন্দ্রমুখী পাওয়া যায় না। ভাল ফলের জন্য একটু বেশি দাম দিতেই হয়। কিন্তু আমাদের একটা টার্গেট রয়েছে, তা হল অচিরেই বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে খরচ মাত্র ৫০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা। আমার স্থির বিশ্বাস, শীঘ্রই আইভিএফ-এর খরচ নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালে নিয়ে আসা খুব একটা কঠিন হবে না। এখন আমি জুনিয়র ডাক্তারদের ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ করে তুলছি। টার্গেট, যত দ্রুত সম্ভব বেশি সংখ্যায় বিশেষজ্ঞ তৈরি করে বাংলার চিকিৎসা জগতে ছড়িয়ে দেওয়া। এতে অনেক বেশি রোগীকে কম খরচে পরিষেবা দেওয়ার সুযোগ আসবে। তখন দেশের বহু মায়ের মুখে হাসি ফুটবে, পরিবারেও খুশির-হাওয়া আসবেই আসবে।

February 13, 2020 by Site Admin 0 Comments

বন্ধ্যাত্ব মানেই নারীর অক্ষমতা নয়

ঘটনা-১
সাত-আট বছর আগের কথা। আমার চেম্বারে একজন প্রবাসী ভদ্রলোক ঢুকলেন তার স্ত্রীকে নিয়ে। ভদ্রলোকের বয়স ৫৬ বছর। তার স্ত্রীর বয়স ১৭ বছর এবং ইনি তার পঞ্চম স্ত্রী। রোগীর হিস্ট্রি এ রকম- তিনি প্রবাসে থাকেন। এক-দুই বছর পর পর ছয় থেকে আট মাসের জন্য নিয়মিত দেশে আসেন। প্রথম স্ত্রী নিঃসন্তান থাকায় তিনি একের পর এক অপেক্ষাকৃত কম বয়সের চারজন মেয়েকে বিয়ে করেছেন সন্তান লাভের আশায়।

February 13, 2020 by Site Admin 0 Comments

চিকিৎসায় বন্ধ্যাত্ব জয় করা সম্ভব

সন্তানহীনতার জন্য প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রেই পুরষরা দায়ী। তাজ্জবের বিষয় হল যে মহিলাদের অনেকাংশেই কারণগুলোর সাথে অনেক লক্ষণ জড়িত থাকলেও পুরুষদের একমাত্র ইম্পোটেন্সি ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে কোন লক্ষণ থাকে না বললেই চলে। এজন্য পুরুষদের কারণগুলো অগোচরেই থেকে যায়।

February 13, 2020 by Site Admin 0 Comments

পুরুষ বন্ধ্যাত্ব

সন্তানহীনতার জন্য প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রেই পুরষরা দায়ী। তাজ্জবের বিষয় হল যে মহিলাদের অনেকাংশেই কারণগুলোর সাথে অনেক লক্ষণ জড়িত থাকলেও পুরুষদের একমাত্র ইম্পোটেন্সি ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে কোন লক্ষণ থাকে না বললেই চলে। এজন্য পুরুষদের কারণগুলো অগোচরেই থেকে যায়।

February 13, 2020 by Site Admin 0 Comments

বাংলাদেশে নিঃসন্তান দম্পতিরা টেস্ট টিউবের মাধ্যমে সন্তান লাভ করতে পারবেন

কুমিল্লার দম্পতি সোহেল (৩৪) ও তানিয়ার (২৬) বিয়ে হয়েছে প্রায় ছয় বছর। বিয়ের পাঁচ বছরেও কোন সন্তান হয়নি তাদের যার সবটুকু দায়ভার এসে পড়ে তানিয়ার ওপর। দিনরাত শ্বশুরবাড়ির নানা গঞ্জনা পোহাতে হতো তাকে। সোহেলের মাও ছেলেকে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তারা প্রথমে গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা শুরু করেছিলেন। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারলেন সোহেলের কিছু শারীরিক সমস্যার কথা।

February 13, 2020 by Site Admin 0 Comments

হতাশ হবেন না, সঠিক চিকিৎসায় বাবা হওয়া কঠিন নয়

আমূল বদলে যাওয়া লাইফস্টাইল অন্যান্য অসুখবিসুখের সঙ্গে বাড়াচ্ছে বন্ধ্যাত্ব। বিশেষ করে পুরুষের ক্রমবর্ধমান বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ আমাদের রোজকার জীবনযাত্রা। এর ফলে শুক্রাণুর পরিমাণ কমার সঙ্গে সঙ্গে তার গুণগত মানও খারাপ হচ্ছে।

February 13, 2020 by Site Admin 0 Comments

বন্ধ্যাত্বের যত কারণ ও এর চিকিৎসা

বন্ধ্যাত্ব নিয়ে আমাদের সমাজে বেশ কিছু ভুল ধারণা আছে। প্রাচীন কালে এসব ধারণা অনেক বেশি থাকলেও বর্তমানে অনেকটাই দূর হয়েছে। কিছু নিয়ম ও অভ্যাস পরিবর্তন করলে বন্ধ্যাত্ব থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়।

English